Previous Lesson -- Next Lesson
১১. ইহুদি ও অন্যান্য জাতির মধ্য থেকে আগত বিশ্বাসীদের মধ্যে যে বিভেদ ছিল মসিহ তা দূর করে দিয়েছেন (রোমীয় ১৫:৬-১৩)
রোমীয় ১৫:৬-১৩
৬. তাহলে তোমরা মনে ও মুখে এক হয়ে আমাদের হযরত ঈসা মসিহের আলস্নাহ ও পিতার প্রশংসা করতে পারবে৷ ৭. আলস্নাহর গৌরব যাতে প্রকাশিত হয়, সেজন্য মসিহ যেমন তোমাদের আপন করে নিয়েছেন তেমনি তোমরাও একে অন্যকে আপন করে নাও৷ ৮-৯ মনে রেখো, আলস্নাহর কতা যে সত্যি তা প্রমাণ করবার জন্য মসিহ ইহুদিদের সেবাকারী হয়েছিলেন৷ এর উদ্দেশ্য ছিল, পূর্বপুরম্নষদের কাছে আলস্নাহ যে সব ওয়াদা করেছিলেন তা যেন পূর্ণ হয় এবং তাঁর দয়ার জন্য অ-ইহুদিরা তাঁর প্রশংসা করে৷ এ বিষয়ে পাক-কিতাবে লেখা আছে, এজন্য অন্য জাতিদের মধ্যে আমি তোমার প্রশংসা করব আর তোমার সুনাম গাইব৷ ১০. আবার বলা হয়েছে, হে সমসত্ম জাতির লোকেরা, তোমরা আলস্নাহর বান্দাদের সঙ্গে তাঁর প্রশংসা কর৷ ১১. আবার আছে, হে সমসত্ম জাতি, মাবুদের গৌরব কর; সমসত্ম লোক তাঁর প্রশংসা করম্নক৷ ১২. আবার নবী ইশাইয়া বলেছেন, যিনি ইয়াসিরের মূল তিনি আসবেন, সব জাতিকে শাসন করবার জন্য তিনি দাঁড়াবেন৷ তাঁর ওপরেই সব জাতির লোকেরা আশা রাখবে৷ ১৩. যিনি আশা দান করেন সেই আলস্নাহ তোমাদের ঈমানের মধ্য দিয়ে অসীম আনন্দ ও শানত্মিতে তোমাদের পরিপূর্ণ করম্নন৷ তাহলে পাক-রূহের শক্তিতে তোমাদের দিলে আশা উপচে পড়বে৷
যে কেউ রোমীয় পত্রের নবম অধ্যায় থেকে পঞ্চদশ অধ্যায় পর্যনত্ম পাঠ করেন তিনি বুঝতে পারবেন, ইহুদিদের মধ্য থেকে মসিহে বিশ্বাসী ও অন্যানত্ম বংশ থেকে আগত বিশ্বাসীদের মধ্যে বিরাজমান রয়েছে একটি অসমর্থনীয় পার্থক্য৷ এ পার্থক্যের মূল কারণ হলো ত্বকচ্ছেদ ও মুসা নবীর মারফত খাদ্য দ্রব্যের ওপর প্রদত্ত শরীয়তের নিয়মাচার আর ইহুদি ও মসিহিদের মধ্যকার শিক্ষাকলাপ৷ রোমের জামাতে পৌলের সুন্দর উপদেশ দেবার কারণ হলো, ইহুদি বিশ্বাসীদের সাথে অইহুদি বিশ্বাসীদের মধ্যে স্থিত দূরত্ব বিলোপ সাধন করে দেয়া, আর উভয় গোষ্টির মধ্যকার বৈষম্য দূরীকল্পে সংযোগ সেতু স্থাপন করে দেয়া, যে কাজটি মসিহ সকলকে ঐক্যে আনয়নের জন্য নিজ প্রাণ করেছেন কোরবানি৷ তাই তিনি তাঁর পত্রের শেষে লিখেছেন, 'পরষ্পরকে আনত্মরিকভাবে গ্রহণ কর, যতই বৈষম্য তোমাদের মধ্যে থাক না কেন, তা মৌলিক বা প্রথাগত হোক না কেন, কেননা মসিহ ঈসা তোমাদের কবুল করেছেন, করেছেন নাজাত৷ আর এ নাজাতের রহস্য যে কেউ বুজতে পারে সেই পিতা, পুত্র এবং পাকরূহের মহিমা প্রকাশ করে থাকেন, ফলে তারা হিংসা, ঘৃণা ও মতপার্থক্য ভুলে সমন্বরে খোদার রহমতের প্রশংসা করে থাকে৷
বিভিন্ন বিশ্বাসীদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে প্রেমের উপস্থিতি, আর মসিহের প্রেম যেকোনো কল্পিত মতপার্থক্যের চেয়ে থাকে অনেক বেশি শক্তিশালী৷ ইহুদিদের মধ্য থেকে আগত মসিহিদের কাছে হযরত পৌল এ নীতিটি বিষদভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, প্রত্যাশিত মসিহ সেবকের রূপে মসিহিদের মধ্যে আবিভর্ূত হলেন, খোদার সত্য ও ধার্মিকতা কথায় ও কাজে প্রকাশ করার জন্য, আর প্রতিজ্ঞার পূর্ণতা ও বাসত্মবায়ন করার জন্য৷ মসিহের আবির্ভাবের বিষয়ে নবীদের মাধ্যমে যে সকল ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছিল তারও বাসত্মবায়ন করা হয়েছে মসিহের রক্তমাংসের দেহে আবির্ভাবের মাধ্যমে, যেন তারা বুঝতে পারে সত্যকে অনর্থ করে প্রকাশ করা সম্ভব নয়৷
অসূচী অইহুদীদের মধ্য থেকে আগত মসিহিদের কাছে পৌলের ব্যাখ্যা হলো, তাদের উচিত মসিহের গৌরব প্রকাশ করা, তিনি তাদের প্রতি করম্ননা প্রকাশ করেছেন বলে, আর নিজের সাথে তাদের সংযুক্ত করেছেন, আর তাদের নতুন ভাবে সৃষ্টি করে দত্তক পূত্রের অধিকার প্রদান করেছেন৷ যারা ইহুদি নন তারা যখন পিতা পুত্রের প্রতি প্রশংসামুখর থাকে তখন প্রমান হয় মসিহের মধ্যে তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে৷ আর তা নবীদের গ্রন্থে দত্ত প্রতিজ্ঞার বাসত্মবায়ন ও পূর্ণতা, কেননা, মসিহ অইহুদিদের জন্যও আলো আর অইহুদিদের মধ্য থেকে মসিহে ঈমানদার ব্যক্তিদের সমান অধিকার রয়েছে মসিহে আনন্দ প্রকাশ করার অংশ নেবার, কেননা মসিহ প্রকাশ করেছেন তাদের মধ্যেও তাঁর আনন্দ পরিপূর্ণ করবেন (ইউহোন্না ১৫:১১; ১৭:১৩)৷ যা হোক, অইহুদিদের মধ্য থেকে আগত বিশ্বাসীদের ভুলে যাওয়া উচিত্ হবে না ইহুদিদের মধ্য থেকে মসিহিদের কথা, তাদের উচিত্ সমস্বরে খোদার ও খোদার পুত্রের গৌরব প্রকাশ করা, পুত্রের প্রশংসা করা (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪৩)৷
নবীদের কাছে প্রদত্ত প্রতিজ্ঞাসমূহ কেবল ক্ষুদে মহাদেশের মধ্যেই সীমিত ছিল না বরং সর্বজাতির জন্য তা হয়েছে প্রদত্ত যাতে করে সকল মনোনীত লোকজন বেহেশতি পিতার গৌরব সাধন করতে পারে (আল জবুর ১১৭:১) এ সকল মুল্যবান প্রতিজ্ঞার মধ্যে আমরা রম্নহানি প্রাধিকার ও মানুষের মহান নাজাতের বিষয় দেখতে পাই৷ যে কেউ মসিহে বিশ্বাস করে সেই তাঁর রহমতের প্রাচুর্যের অধিকারী হতে পারে৷
নবী ইশাইয়া ভবিষ্যদ্বানী করেছেন, 'ইয়াসির গোড়া থেকে একটা নতুন চারা বের হবেন; তাঁর মূলের সেই চারায় ফল ধরবে (ইশাইয়া ১১)৷ উক্ত ভবিষ্যদ্বানী মসিহের মধ্য দিয়ে পেয়েছে পরিপূর্ণতা, কেননা তিনি পিতার দক্ষিণ হাতে রয়েছেন সমাসীন, আর বেহেশত ও দুনিয়ার সকল ক্ষমতা তাঁর হাতে করা হয়েছে সমর্পণ৷ মসিহ তার সাবাবিদের আজ্ঞা করেছেন সমুদয় জগতে নাজাতের বারতা পৌছে দিতে, সকল জাতির লোকদের তাঁর সাহাবি হিসেবে নিয়োগ দিতে, যেন তারা সকলে পাকরূহের দ্বারা পূর্ণতা ও পরিচালিত হতে পারে, আর খোদার রাজ্য যেন তাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা ও বৃদ্ধি লাভ করে৷
অইহুদিদের কাছে প্রচারকারী সাহাবির প্রত্যাশা ছিল ঈমানদারদের মধ্যে একটা ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা৷ উভয় দলের মধ্যে বেহেশতি আনন্দের পূর্ণতা তিনি খুঁজে ফিরছেন, শানত্মি রাজের প্রতিষ্ঠিত শানত্মিতে তাদের মধ্যে প্রকৃত বিশ্বাস ও ঐক্য স্থাপন করা, যার ফলে তাদের সকলের মধ্যে সৃষ্টি হবে পবিত্র ত্রিত্তের শক্তি, প্রাচুর্য ও প্রত্যাশা যা পাকরূহের উপস্থিতিতে গড়ে ওঠে৷
প্রার্থনা: হে বেহেশতি পিতা, তোমার প্রিয় পুত্র ঈসা মসিহের মধ্য দিয়ে প্রত্যাশা ইহুদিদের মধ্য থেকে মসিহিগণ পরজাতিদের মধ্য থেকে মসিহিদের যেন ঘৃণা বা প্রত্যাখ্যান না করে বরং অদৃশ্য ঐকসূত্র সৃষ্টি হয় মসিহের অভিষেকের ফলে৷ তারা যেন সকলে মসিহের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, আর পরষ্পরকে সম্পর্ক পাকরূহের শক্তিতে অর্জিত হয় ও একত্রে বসবাস করে চলে৷ আমিন৷
প্রশ্ন: