Previous Lesson -- Next Lesson
৬. মানুষ সংক্রানত্ম হুকুমের সারকথা (রোমীয় ১৩:৭-১০)
রোমীয় ১৩:৭-১০
যাঁর যা পাওনা তাঁকে তা দাও৷ যিনি খাজনা আদায় করেন তাঁকে খাজনা দাও; যিনি শুল্ক আদায় করেন তাঁকে শুল্ক দাও; যাঁকে শ্রদ্ধা করা উচিত তাঁকে শ্রদ্ধা কর; যাঁকে সম্মান করা উচিত তাঁকে সম্মান কর৷ ৮. অন্যের কাছে এক মহব্বত করে তারা মূসার শরীয়ত মেনে চলেছে৷ ৯. হুকুম আছে, 'জেনা কোরো না, খুন কোরো না, চুরি কোরো না, লোভ কোরো না৷' এই সব এবং এই রকম আরও অন্যান্য হুকুম মিলিয়ে এক কথায় বলা হয়েছে, 'তোমার প্রতিবেশিকে নিজের মত মহব্বত কোরো৷' ১০. মহব্বত করলে কেউ কারও ক্ষতি করে না৷ তাহলে দেখা যায়, মহব্বতের মধ্য দিয়েই সমসত্ম শরীয়ত পালন করা হয়৷
রোমের শাসন প্রনালী ও আর্থিক দিকগুলো তদানিনত্মন বিশ্বাসীদের অর্থাত্ পৌলের সময়ের জন্য কোনো গুরম্নত্বের বিষয় ছিল না, কেননা মসিহিগণ ছিলেন সংখ্যালক্ষু, যার কারণে বিধানসভার ওপর তাদের কোনো প্রভাব ছিল না৷ তাই পৌল তাদের আজ্ঞা দিয়েছেন সঠিকভাবে কর পরিশোধ করার জন্য এবং নিয়মের পরিপন্থি কোনো কিছু না করার জন্য, রাষ্ট্রীয় নিয়ম-কানুন যথাযথ পালন করার জন্য, আর সরকারী বিভাগ যা কিছু বলে তা মান্য করার জন্য, তাদের জানতে হবে গুনাহগারদের জন্য ও সরকারের জন্য মুনাজাত করা তাদের কর্তব্য, যেন সরকার প্রধান নিরপেক্ষ ও প্রজ্ঞামাফিক আচরণ করে চলে৷ কিন্তু রোমীয় সরকারের অবস্থা বিপরীত হয়ে গেল, তারা মসিহকে অত্যাচার করলো এবং হুকুম জারি করলো যারাই রাজার আরাধনা না করবে তাদের হত্যা করা হবে, আর তাদের ছুড়ে মারতো খোলা মাঠে হিংস্র পশুর মুখের ওপর যেন তাদের ছিন্নভিন্ন করে খেয়ে ফেলে৷
জন্মসূত্রে পৌল ছিলেন রোমীয় নাগরিক৷ তিনি সরকারের বিষয়ে নিজেকে দায়িত্ববান মনে করতেন, তাই মসিহের বাক্য ও শিক্ষা প্রয়োগ করতে সজাগ ছিলেন, 'সিজারের যা কিছু প্রাপ্য তা সিজারকে দাও, আর খোদার যা কিছু প্রাপ্য তা খোদাকে দাও'৷ জামাতের প্রতি খেয়াল রেখে তিনি বলতেন মসিহের হুকুম বিশ্বের সকল প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রযোজ্য, কেননা মসিহ বলেছেন, 'একটা নতুন হুকুম আমি তোমাদের দিচ্ছি- তোমরা একে অন্যকে মহব্বত কোরো৷ আমি যেমন তোমাদের মহব্বত করেছি তেমনি তোমরাও একে অন্যকে মহব্বত কোরো৷ যদি তোমরা একে অন্যকে মহব্বত কর তবে সবাই বুঝতে পারবে তোমরা আমার সাহাবী' (ইউহোন্না ১৩:৩৪-৩৫)৷
মসিহ যেমন প্রেম করেন প্রত্যেক মসিহি যদি তেমন প্রেম করে তবে তার অর্থ হলো তিনি মসিহের আজ্ঞা পালন করেছেন৷ এ ঐশি প্রেম হলো জামাতের গঠনতন্ত্র ও নিয়মনীতি, আর পাকরূহ হলো প্রয়োজনীয় শক্তি ও মৌল সত্তা বাসত্মবায়নের জন্য৷ একই সময়ে মসিহ কিন্তু মুসা নবীর ওপর ধার্য করা শরীয়ত বাতিল করেন নি; 'প্রতিবেশিকে নিজের মতো প্রেম করবে' (লেবীয় ১৯:১৮)৷
দশ আজ্ঞার দ্বিতীয় অংশে পৌল এ বিষয়টির বিশেস্নষণ করেছেন এভাবে কাউকে ঘৃণা বা খুন করো না৷ জেনা করো না৷ নাপাক জীবন যাপন করো না৷ চুরি করো না, কঠোর পরিশ্রমে জীবিকা নির্বাহ করো৷ কারো ধনৌশ্বর্য দেখে দেখে হিংসায় জ্বলে ওঠে না, কিন্তু খোদা তোমাকে যা কিছু দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকো৷ এ সকল হুকুম পালন করার মধ্য দিয়ে প্রতিবেশিকে মহব্বত করার পূর্ণতা আসে৷
পৌল ভাবাবেগে আপস্নুত হয়ে অথবা পান্ডিত্য জাহির করার জন্য এ কথাগুলো বলেন নি, তিনি জোর দিয়েছেন, ব্যভিচার থেকে বিরত থাকাটাই হলো সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সত্যিকারের প্রেম প্রতিষ্ঠার৷ তিনি শর্তারোপ করেছেন ঐশি প্রেম, 'এগোপে' যৌন প্রেম ও মাংসিক কামনা বাসনার ওপর বিজয় অর্জন করে৷
যেখানে রয়েছে স্বার্থপরতা সেক্ষেত্রে সত্যিকারের প্রেম কার্যকর বা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না বরং সর্বপ্রথম অভাবিদের পাশে দাড়ানো, তাদের দারিদ্র দূর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করার মধ্যে তা হয় বাসত্মবায়িত৷ আমাদের উচিত হবে না দুখের কারণ সৃষ্টি করা, সমস্যা তৈরি করা, অন্যকে সমস্যায় ফেলানো, বরং সমস্যার সময় তাদের সাহায্য করাটাই হলো কর্তব্য, দুঃখে শানত্ম্বনা দান ও তাদের প্রয়োজনের ক্ষেত্রে তাদের সমর্থন দান করা৷
প্রশ্ন জাগতে পারে 'কে আপনার প্রতিবেশি'? মসিহ ইতোপূর্বে তার জবাব দিয়ে দিয়েছেন৷ আপনার রক্তের সম্বন্ধ নয় বলে বুঝানো হয়, তাদের ছাড়া, যাদের সাথে আপনার দৈনন্দিন সাক্ষাত্ হয়, যারা আপনার কাছ থেকে একটু ভালো কথা প্রত্যাশা করে এই চেনা-জানার মধ্যে যাদের কাছে আপনি সুসমাচার পৌছে দিচ্ছেন এরাই আপনার প্রতিবেশি, কারণ 'নাজাত আর কারো কাছে পাওয়া যায় না, কারণ সারা দুনিয়াতে আর এমন কেউ নেই যার নামে আমরা নাজাত পেতে পারি' (প্রেরিত ৪:১২)৷
প্রার্থনা: প্রভু মসিহ, আমরা তোমার আরাধনা করি, কেননা তুমি তোমার জামাতকে এক নতুন আজ্ঞা দিয়েছো, আর তুমি তাকে পাকরূহের দ্বারা শক্তি সঞ্চার করেছো তা বাসত্মবায়িত করার জন্য৷ আমাদের ক্ষমা করো যদি দ্রম্নত পদক্ষেপ নিতে না গিয়ে কঠিন হৃদয়ে কাউকে মনোব্যথা দিয়ে থাকি৷ আমরা যেন আমাদের বন্ধুদের বুঝতে পারি তেমন শক্তি ও প্রজ্ঞা দান করো, যাদের জন্য আমরা প্রার্থনা করি, তাদের আশির্বাদ দান করো, জীবন-জীবিকার জন্য যোগ্য কাজ যুগিয়ে দাও আর আমাদের শিক্ষা দাও সকলকে সেবা দান করার জন্য যে কোনো অবস্থায়ই না আমরা থাকি৷
প্রশ্ন: