Previous Lesson -- Next Lesson
১. পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির বৈথেসদাতে সুস্থকরণ (যোহন ৫:১-১৬)
যোহন ৫:১-৯
১. এই সমস্ত ঘটনার পরে ঈসা মসিহ জেরুজালেমে গেলেন, কারণ সেই সময় ইহুদিদের একটা ঈদ ছিল৷ ২. জেরুজালেমে মেষ দরজার নিকটে একটা পুকুর আছে; তাহার পাঁচটা ঘাট, প্রত্যেকটিই ছাদ দেওয়া৷ ৩. ইব্রানী ভাষায় পুকুরটির নাম 'বৈথেসদা৷' সেই সমস্ত ঘাটে অনেক রোগী পড়িয়া থাকিত৷ অন্ধ, খোঁড়া, এমনকি শরীর যাহাদের একেবারে শুকাইয়া গিয়াছে তেমন লোকও তাহাদের মধ্যে ছিল৷ ৪. একজন ফেরেস্তা সময়ে সময়ে ওই পুকুরে নামিয়া আসিয়া পানি কাঁপাইতেন৷ আর তাহার পরেই যে প্রথমে পানির মধ্যে নামিতো, তাহার যে কোনো রোগ ভালো হইয়া যাইত৷ ওই সমস্ত রোগী পানি কাঁপিবার অপেক্ষায় সেখানে পড়িয়া থাকিত৷ ৫. আটত্রিশ বছর ধরিয়া রোগে ভুগিতেছে তেমন একজন লোকও সেখানে ছিল৷ ৬. অনেকদিন ধরিয়া সে এইভাবে পড়িয়া আছে জানিয়া ঈসা মসিহ তাহাকে জিজ্ঞাস করিলেন, 'তোমার কি ভালো হইবার ইচ্ছা আছে?' ৭. রোগীটি উত্তর দিল, 'জনাব, আমার এমন কেহ নাই যে পানি কাঁপিয়া উঠিবার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে পুকুরে নামাইয়া দেয়৷ আমি যাইতে না যাইতেই আর একজন আমার আগে নামিয়া পড়ে৷' ৮. ঈসা মসিহ তাহাকে বলিলেন, 'ওঠ, তোমার বিছানা তুলিয়া লইয়া হাঁটিয়া বেড়াও৷' ৯. তখনই সেই লোকটি ভালো হইয়া গেল ও তাহার বিছানা তুলিয়া লইয়া হাঁটিতে লাগিল৷
খুব সম্ভবত, ঈসা মসিহ গালিলে নয় মাস অতিবাহিত করে ছিলেন৷ তারপর তিনি জেরুজালেমে ভোজে অংশ নিয়েছিলেন যা ইহুদিদের তাঁবুর ভিতরে এবাদতের আয়োজিত হয়েছিল৷ তিনি জানতেন রাজধানীতেই বিশ্বাসের সাফল্য চূড়ান্তভাবে আসবে৷ যদিও তিনি আইনজ্ঞ এবং ধার্মিক লোকদের সাথে মোকাবেলা করছিলেন, তিনি বিশ্বস্ততার সাথে আইন মেনে চলেন৷ বছরে তিনবার তিনি জেরুজালেমে এবাদতখানায় তীর্থযাত্রায় যেতেন, যখনই সেটা সম্ভব হতো (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬ : ১৬)
শহরের মধ্যস্থলে একটা ডোবা ছিল, যা গ্রিক ভাষ্য অনুসারে মাঝে মাঝে একজন ফেরেস্তা ওই ডোবার পানি কাঁপাইত৷ হেরোদ ওই ডোবার চারিদিকে স্তম্ভ দিয়ে বারান্দা তৈরি করেছিল৷ সাম্প্রতিককালে ওই স্তম্ভগুলির ধ্বংসাবশেষ আবিস্কৃত হয়৷ এই কাঠামোর নাম দেওয়া হয়েছিল 'কৃপার ঘর'৷ কারণ অনেক পঙ্গু ব্যক্তিরা আরোগ্যের আশায় ওই জায়গায় পড়ে থাকত৷ পানি কাঁপিবার আশায় অপেক্ষা করতো৷ তারা চিন্তা করতো প্রথম যে নিজেকে ওই পানির মধ্যে ফেলতে পারবে সেই সুস্থ হবে৷
ঈসা মসিহ ডোবাটি পরিদর্শন করেছিলেন যা ছিল অসুস্থ লোকদের ভিড়ে ঠাসা৷ তিনি একজন লোকের দিকে লক্ষ্য করেছিলেন যে লোকটি ব্যথা এবং তিক্ততার সাথে আটত্রিশ বছর যাবত পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছিল৷ এটাও উল্লেখ্য যে, অন্যের প্রতি পঙ্গু লোকটির ঘৃনা জন্মেছিল৷ এই কৃপার ঘরে প্রত্যেকেই নিজের জন্য ব্যাস্ত ছিল, তার জন্য কারো সমবেদনা ছিল না৷ তবুও সে আশা ছাড়েনি এবং বেহেশতি কৃপা পাবার জন্য অপেক্ষা করছিল যদি সুযোগ কদাচিত আসে৷ হঠাত্ করেই কৃপা এসেছিল মনুষ্যদেহধারীর মধ্য দিয়ে যিনি তার সামনে এসে দাঁড়ালেন এবং ঈসা মসিহ তার আরোগ্য দান শুরু করলেন এবং লোকদের দৃষ্টি ডোবার দিক থেকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করলেন৷ তখন তিনি আরোগ্য লাভের জন্য পঙ্গু লোকটির ইচ্ছাকে উদ্দীপ্ত করলেন৷ ঈসা মসিহ ব্যক্তিটিকে তার দুঃখ প্রকাশ করবার সুযোগ দিলেন, যে চিত্কার করে বলেছিল, 'কেউ আমাকে গ্রাহ্য করে না! প্রায়ই আমি আরোগ্য লাভ করতে চেয়েছি কিন্তু আমার আস্থা হারিয়েছি; কেউ আমার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে না৷ হয়তো বা আপনি পানি কেঁপে উঠবার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবেন, যাতে করে আপনি আমাকে তার মধ্যে ফেলতে পারেন?'
কেউ আমার প্রতি গ্রাহ্য করে না! ভাই, এটাকি আপনার অবস্থা? অন্যেরা কি আপনাাকে প্রত্যাখ্যান করে? আমরা আপনাকে বলছি যে ঈসা মসিহ আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন; তিনি আপনাকে খোঁজেন এবং আপনাকে খুঁজে পেয়েছেন৷ তিনি আপনাকে সাহায্য এবং রক্ষা করতে পারেন৷ এগুলো ছিল সেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত লোকটির অনুভূতি যা সে উপলব্ধি করেছিল৷ তার প্রশ্নের ঝলক ঈসা মসিহের চোখে ধরা পড়েছিল, যার সমবেদনা লোকটির মধ্যে খোদার ভালোবাসার আস্থা সৃষ্টি করেছিল৷ যখন ঈসা মসিহ ওই দুর্ভাগা মানুষটির আরোগ্য লাভের আকুল আকাঙ্ক্ষা দেখেছিলেন, এবং ঈসা মসিহের পরে তার এই বিশ্বাস ছিল যে তিনি তাকে সুস্থ করতে পারবেন, তিনি তাকে আদেশ করলেন, 'ওঠ, এবং তোমার বিছানা তুলে নিয়ে হাঁটিয়া বেড়াও'৷ এটা ছিল একটি বেহেস্তী হুকুম, যা অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল৷ পক্ষাঘাতগ্রস্ত লোকটি ঈসা মসিহের কথার ওপর বিশ্বাস করেছিল, এবং যে ক্ষমতোা তার ভিতর দিয়ে এসেছিল তার ওপরও তার বিশ্বাস ছিল এবং তার হাড়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত স্রোতকে অনুভব করেছিল এবং সেই শক্তি তার দেহকে পুনরায় সক্রিয় করেছিল৷ সে শক্তি ফিরে পেয়েছিল এবং আরোগ্যলাভ করেছিল৷
তত্ক্ষণাত্ সে আনন্দে লাফিয়ে উঠেছিল, দাঁড়িয়ে পড়েছিল এবং তার বিছানা মাথায় তুলে নিয়ে আনন্দের সাথে বয়ে নিয়ে গেল৷ ঈসা মসিহের বাক্যের ক্ষমতোা তার বিশ্বাসকে পূর্ণ করলো, এবং সাথে সাথেই আরোগ্য লাভ করলো৷
প্রার্থনা: প্রভু ঈসা মসিহ, তোমাকে ধন্যবাদ দিই যে তুমি এই পঙ্গু লোকটিকে পাশ কাটিয়ে যাওনি, কিন্তু সমবেদনার সাথে তার দিকে দৃষ্টি দিয়েছিলে৷ তুমি ছাড়া করুণাময় ব্যক্তি তার আর কেউ ছিল না৷ তোমাকে ধরে রাখতে আমাদেরকে সাহায্য করো, এবং আমরা যেন মানুষের সাহায্যের ওপর নির্ভর না করি৷ আমাদেরকে তোমার ভালোবাসার ভাবমূর্তির মদ্যে রূপান্তরিত কর যাতে অন্যদের যত্ন নিতে পারি, তাদের সাথে তোমার আশর্ীবাদের বিষয়ে অংশ নিতে পারি৷
প্রশ্ন: