Previous Lesson -- Next Lesson
খ) ঈসা মসিহ তার সাহাবিদের উত্পন্ন ফসল দেখতে নিয়ে গেলেন (যোহন ৪:২৭-৩৮)
যোহন ৪:৩১-৩৮
৩১. ইতিমধ্যে তাঁহার সাহাবিরা তাঁহাকে অনুরোধ করিয়া বলিলেন, 'হুজুর, কিছু খান৷' ৩২. ঈসা মসিহ তাঁহাদের বলিলেন, 'আমার নিকট এমন খাবার আছে যাহার কথা তোমরা জান না৷' ৩৩. তাহাতে সাহাবিরা বলাবলি করিতে লাগিলেন, 'তাহা হইলে কি কেহ তাঁহাকে কোন খাবার আনিয়া দিয়াছে'? ৩৪. তখন ঈসা মসিহ তাঁহাদের বলিলেন, 'যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার ইচ্ছা পালন করা এবং তাঁহার কাজ শেষ করাই আমার খাবার৷ ৩৫. তোমরা কি বল না, 'আর চার মাস বাকি আছে, তাহার পরেই ফসল কাটিবার সময় হইবে'? কিন্তু আমি তোমাদের বলিতেছি, চোখ তুলিয়া একবার ক্ষেতের দিকে তাকাইয়া দেখ, ফসল কাটিবার মতো হইয়াছে৷ ৩৬. যে ফসল কাটে সে এখনই বেতন পাইতেছে এবং অনন্ত জীবনের বীজ বুনে আর যে ফসল কাটে, দুজনেই সমানভাবে আনন্দ পায়৷ ৩৭. ইহাতে এই কথা প্রমাণ হয় যে, 'একজন বুনে আর অন্য একজন কাটে'৷ ৩৮. আমি তোমাদের এমন ফসল কাটিতে পাঠাইলাম যাহার জন্য তোমরা পরিশ্রম করো নাই৷ অন্যরা পরিশ্রম করিয়াছে আর তোমরা সেই পরিশ্রমের ফসল কাটিয়াছ'৷
পাপী মহিলাটির রুহকে মুক্তি দেবার এবং তাকে অনন্ত জীবনের দিকে পরিচালনা করার পর, ঈসা মসিহ তার সাহাবিদের দিকে ফিরলেন এবং তাদেরকেও একই ধরনের কাজ সম্পাদন করতে বললেন৷ তাদের চিন্তাধারণা গুলো বস্তুগত জিনিস যা জাগতিক ছিল, তার মধ্যেই তারা পড়ে ছিল৷ মহিলাটির হৃদয়ে খোদার রুহ যে কাজ করেছিল তারা তাতে আনন্দিত হয়নি৷ নিঃসন্দেহে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য এবং পানীয় একটি অত্যাবশ্যকীয় জিনিস, কিন্তু রুটি থেকেও আরও বেশি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য এবং পানি থেকেও বেশি সন্তুষ্টি আরও কিছু মধ্যেও আছে৷ এই জিনিসটি তখনো তারা উপলব্ধি করতে পারেনি৷ ঐ মহিলাটির থেকে তারা খুব ভালো কিছু ছিল না, ঈসা মসিহকে অনুসরণ করবার মধ্য দিয়ে তাদের ধার্মিকতা পালন করা সত্বেও ঈসা মসিহ তাদের কাছে বেহেশতি অথবা আধ্যাত্মিক খাদ্যের অর্থকে ব্যাখ্যা করেছিলেন৷ এটি আত্মাকে যে কোন বস্তুগত খাদ্য থেকে বেশি পরিতুষ্ট করে৷ ঈসা মসিহ আশর্ীবাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে সব কিছু থেকে বেশি পরিতুষ্ট হয়েছিলেন এবং আরও পরিতুষ্ট হয়েছিলেন তার পিতার ইচ্ছাগুলোকে পূরণ করবার মধ্য দিয়ে৷
ঈসা মসিহ ছিলেন খোদার প্রেরিত, তিনি ছিলেন মুক্ত সন্তান কিন্তু পিতার অনুগত, যিনি তার ইচ্ছাগুলো পরম আনন্দের মধ্য দিয়ে সম্পাদন করতেন, কারণ খোদা হলেন প্রেম৷ যে কেউ প্রেমের মধ্যে বাস করে সে খোদার মধ্যে বাস করে৷ ঈসা মসিহের আনুগত্য এটা বোঝায় না যে তিনি পিতা থেকে নিম্নতর, বরং তার প্রেমের সীমার গভীরতাকে প্রমাণ করে৷ পুত্র বলেন দুনিয়ার মুক্তি হলো তার পিতার কাজ যদিও তিনি নিজেই এই কাজ সম্পাদন করেছিলেন৷ তিনি পিতাকে মহিমান্বিত করেন, ঠিক আগেই যেমন পিতা সব কিছুই তার পুত্রকে দিয়েছিলেন৷ পিতা তার পুত্রকে বিশেষ বিশিষ্টতা দিয়েছিলেন এবং তাকে তার ডান হাতের ওপর বসিয়েছেন এবং তাকে বেহেস্ত এবং দুনিয়ার সকল কতর্ৃত্ব দিয়েছিলেন৷
খোদার ইচ্ছা ছিল কুয়াটির কাছে সেই কুলোটা স্ত্রীলোকটিকে রক্ষা করা৷ নাজাত পাবার জন্য কেবলমাত্র ইহুদিদেরকে ডাকা হয়নি কিন্তু সকল মানব জাতিকে ডাকা হয়েছিল৷ সবাই ছিল কলুষিত এবং খোদাকে পাবার জন্য প্রবলভাবে আকাঙ্ক্ষিত ছিল৷ মহিলাটির সাথে সাক্ষাতের পর ঈসা মসিহ্তার মধ্যে পরিপক্কতা এবং ক্ষমা পাবার আকাঙ্ক্ষা খুঁজে পেয়েছিলেন৷ খোদার ক্ষমা গ্রহণ করবার প্রস্তুতি মহিলাটির মধ্যে ইহুদিদের থেকে বেশি প্রতিয়মান ছিল৷ হঠাত্ করেই তার সামনে তিনি দেখতে পেলেন গোটা মানব জাতিকে গমে ফসল ভর্তি বিশাল মাঠের মতো যা পেঁকে উঠছিল যা পাক-রুহ দ্বারা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল৷
যাইহোক, সাহাবিরা মাঠটি দেখতে পায়নি যা ছিল দুনিয়ার জন্য সংগৃহীত ফসলের প্রতীক৷ ঈসা মসিহ শীতকালে শমরীয়াতে পৌছিয়াছিলেন এবং ফসল আসতে বেশ কয়েক মাস বাকি ছিল৷ ঈসা মসিহ তাদের বললেন, তোমরা ভাসা ভাসা বিষয়গুলির দিকে তাকাও যা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়৷ তোমরা সত্যের দিকে তাকাও যা মানুষের রুহের মর্মস্থলে রয়েছে, তোমরা প্রশ্ন করতে, সমৃদ্ধ জীবনের আকাঙ্ক্ষকে এবং খোদাকে খুঁজতে বাধা দাও৷ আজ ফসল তোলার সময়৷ খোদার পুত্রকে তাদের ত্রাণকর্তা হিসাবে গ্রহণ করতে অনেকেই উদ্ধিগ্ন, যদি তাদের কাছে জ্ঞান এবং ভালোবাসা দিয়ে মুক্তির বাণীকে উপস্থাপন করা হয়৷
তোমাদের অন্যরকম অনুভূতি হতে পারে; আমার চারপাশে যারা আছে তারা অন্ধ অথবা ধর্মান্ধ৷ এটা তেমনি যা সাহাবিরা অনুভব করে; তারা ভাসা ভাসা ভাবে বিচার করে৷ কিন্তু ঈসা মসিহ হৃদয়কে দেখতে পান৷ তিনি ওই পাপী মহিলাটিকে দোষ দেননি যে প্রথমে তাকে বহিরাগত ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করেছিল৷ তিনি মহিলাটির সাথে আলাপ করতে ইতস্তত করেন নি এমন কি যদিও আধ্যাত্মিক আলোচনা মহিলাটির নাগালের বাইরে ছিল, কিন্তু তিনি খুব স্বাভাবিক এবং স্পষ্টভাবে মহিলাটির সাথে কথা বলেছিলেন৷ তাই তিনি তাকে রুহের পরিচালনায় বেশি করে সাহায্য করেছিলেন এবং তার মধ্যে এবাদতের বিষয় এবং ত্রাণকর্তার মহত্ত্বকে জাগয়েছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত না স্ত্রীলোকটি একজন প্রচারক হয়েছিল৷ কি একটা পরিবর্তন! ধার্মিক নিকদিম থেকে রুহের কার্যের ব্যাপারে সে বেশি নিকটতম ছিল৷ যে কেউ প্রভুকে সেবা করে তারই প্রয়োজন হয় ঈসা মসিহের প্রেমময় ভেতরটাকে দেখার, এ কারণে যে, যারা খোদার ন্যায়পরায়ণতাকে সন্ধান করে, তাদের রূঢ়তা এবং উদাসীনতার ব্যাপারে দুশ্চিন্তা করবেন না, খোদা তাদের ভালোবাসেন; ঈসা মসিহ তাদের ডাকেন৷ রহমতের মধ্য দিয়ে একটু একটু করে তাদের মন আলোকিত হবে৷ কতদিন আপনি এই দুনিয়াতে নিশ্চুপ থাকবেন যেখানে কত মানুষ খোদাকে খুঁজছেন?
যখন কোনো ব্যক্তি ঈসা মসিহের কাছে ফিরে আসেন, সে অনন্ত জীবন পায়, অনেক হৃদয় আনন্দে ভরে ওঠে৷ কোন পাপী অনুতপ্ত হলে বেহেস্তে ফেরেস্তাদের মধ্যেও আনন্দধ্বনি শুরু হয়৷ শেষ পর্যন্ত খোদা চান সবাই রক্ষা পাক এবং সত্য জ্ঞানের সন্ধান পাক৷ যারা খোদার ইচ্ছানুযায়ী নিজেকে সাজায় এবং তার বাক্যকে অন্যদের কাছে নম্রভাবে প্রচার করে তারা তাদের নিজেদের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে এবং আনন্দিত হয়৷ ঠিক যেমন ঈসা মসিহ তার নিজের সম্পর্কে বলেছিলেন, 'আমার খাদ্য হলো যিনি আমাকে তার কাজ পরিপূর্ণ করতে পাঠিয়েছেন তাঁর ইচ্ছা পূরণ করা৷'
ঈসা মসিহ তাঁর বাণী শেষ করলেন সাহাবিদের কাছে এই কথা বলে, 'আমি তোমাদেরকে পাঠাচ্ছি ফসল সংগ্রহ করতে৷ বাপ্তিস্মদাতা ইতিমধ্যেই অনুর্বর ক্ষেত চাষ করেছিলেন অনুতাপ করবার বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে, ঈসা মসিহ নিজেই গমের বীজ যা খোদা মাটিতে বুনে ছিলেন, এবং ইতিমধ্যেই তা ফসলে পরিণত হয়েছে৷ আজ আমরা ফল সংগ্রহ করি ক্রুশের ওপর তার মৃতু্যর মধ্য দিয়ে৷ ঈসা মসিহ যদি আপনাকে ফল সংগ্রহ করতে বলেন তাহলে স্বরণ করবেন যে আপনারা ফসল নন৷ কাজটি প্রভুর৷ ঈসা মসিহের ক্ষমতা রুহের ফলেই পরিপক্ব হয়৷ আমরা সকলেই অলাভজনক দাস, তবুও তিনি আমাদেরকে ডাকেন তার বেহেশতি কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করতে, কখনো বীজ ছড়াতে, কখনো চাষ করতে অথবা ফসল কাটতে৷ এটা স্মরণ রাখা ভালো যে আমরা খোদার প্রথম কমর্ী নই৷ আমাদের আগে অনেকেই পরিশ্রম করেছে চোখের পানি ফেলে; তাদের প্রার্থনাসমূহ বেহেশতে লিপিবদ্ধ হয়েছে৷ খোদার অন্য সকল দাসদের থেকে বেশি ভালো সজ্জিত নন, অথবা আপনি বেশি ভালো আচরণ সম্পন্ন নন৷ প্রতি মুহূর্তে আপনি বেঁচে থাকেন তার ক্ষমাপূর্ণ রহমতের মধ্য দিয়ে৷
আপনার কার্যাবলির মধ্যে রুহকে মানিয়া চলতে শিখুন৷ ফসল তুলবার সময় ধন্যবাদের সাথে তাকে সেবা করুন, অন্য সকল ফসল সংগ্রহকারীদের সাথে আপনিও বেহেশতি পিতাকে বিবর্ধিত করুন৷ যারা উচ্চস্বরে চিত্কার করিয়া বলে, 'তোমার রাজ্য আসুক; তুমি সার্বভৌম,ক্ষমতোা এবং গৌরব চিরকাল তোমারই জন্য৷' আমিন৷
গ) শমরীয়াতে সুসমাচারের প্রচার (যোহন ৪:৩৯-৪২)
যোহন ৪:৩৯-৪২
৩৯. যে স্ত্রীলোকটি এই কথা বলিয়া সাক্ষাত্ দিতেছিল যে, সে জীবনে যাহা করিয়াছে সমস্তই তিনি তাহাকে বলিয়া দিয়াছেন, তাঁহার কথা শুনিয়া সেই গ্রামের অনেক শমরীয় ঈসা মসিহের ওপর ঈমান আনিল৷ ৪০. তাহারা ঈসা মসিহের নিকট গিয়া তাঁহাকে তাহাদের সঙ্গে কিছুদিন থাকিতে অনুরোধ করিল৷ সেই জন্য ঈসা মসিহ সেখানে দুই দিন থাকিলেন৷ ৪১. তখন তাহার কথা শুনিয়া আরও অনেক লোক ঈমান আনিল৷ ৪২. সেই স্ত্রীলোকটিকে তাহারা বলিল, 'এখন যে আমরা ঈমান আনিয়াছি তাহা তোমার কথাতে নয়, কিন্তু আমরা নিজেরাই তাঁহার কথা শুনিয়া বুঝিতে পারিয়াছি যে, উনি সত্যই মানুষের নাজাতদাতা৷'
শহর থেকে বহু লোক ঈসা মসিহের কাছে দৌড়ে এসেছিল, তারা স্ত্রীলোকটির ধর্মান্তরণে প্রভাবিত হয়েছিল৷ তাদের ভিতরে তিনি শুভ্রক্ষেত দেখতে পেয়েছিলেন, যা ফসল সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত ছিল৷ তিনি তাদের কাছে বিশ্বাস এবং অনন্ত জীবনের কথা বললেন এবং সেখানে দুইদিন অবস্থান করলেন৷ রুহের ফসল সংগ্রহকারীদের মতো তাঁর সাহাবিরা বাড়িতে বাড়িতে যেতে লাগলেন৷ ব্যক্তি ঈসা মসিহ এবং তার বাক্যগুলো লোকদের মনে গভীর দাগ কেটেছিল৷ তারা উপলব্ধি করলো যে খোদা ঈসা মসিহের মধ্য দিয়ে আমাদের এই দুঃখময় দুনিয়াতে এসেছেন পাপীদেরকে রক্ষা করবার জন্য৷ এই শমরীয়রাই প্রথম তাকে এই খেতাবে ভূষিত করলো 'দুনিয়ার নাজাতদাতা' তারা অনুভব করলো ঈসা মসিহ শুধুমাত্র তার নিজের লোকদের রক্ষা করতে আসেননি, কিন্তু সকল মানুষের পাপ বহন করতে এসেছেন৷ তার ভালোবাসার শক্তির সীমা ছিল না, এমনকি আজকেও তিনি পাপের বন্ধন থেকে তাদেরকে রক্ষা ও মুক্ত করতে পারেন৷ যারা শয়তানের কবলের মধ্যে পড়ে আছে এবং মুক্ত হয়েছে তাদেরকে সংরক্ষণ করেন৷ তিনি সত্যই দুনিয়ার বিচারক৷ রোমের সিজারকে আখ্যায়িত করা হয়েছি 'দুনিয়ার নাজাতদাতা এবং হেফাজতকারী' হিসেবে৷ এই শমরীয়রা অনুধাবন করতে পেরেছিল যে ঈসা মসিহ সিজার থেকে অনেক মহত্; তিনি তাঁর লোকদের অনন্ত শান্তি দান করেন৷
প্রার্থনা: ঈসা মসিহ আমরা তোমাকে ধন্যবাদ দেই; তুমি এই পাপী স্ত্রীলোকটির জীবনকে পুন:প্রতিষ্ঠা করেছ এবং সকলকে দেখিয়েছ যে এবাদত থেকে রুহকে মেনে চলা উত্তম৷ আমাদেরকে বিলম্বিত হওয়া থেকে মুক্ত কর যাতে করে আমরা তোমার ইচ্ছাকে আনন্দ এবং দ্রুততার সাথে পূর্ণ করতে পারি আর তোমার নাজাতের পথ বিপথগামীদের দেখাতে পারি যাতে তারা তোমারর ওপর বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে অনন্ত জীবন পেতে পারে৷
প্রশ্ন: