Previous Lesson -- Next Lesson
২. বাপ্তিস্মদাতা, ঈসা মসিহের পথ প্রস্তুত করেন (যোহন ১:৬-১৩)
যোহন ১:৯-১০
৯ সেই আসল আলো যিনি প্রত্যেক মানুষকে আলো দান করেন, তিনি জগতে আসছিলেন৷ ১০ তিনি জগতেই ছিলেন এবং জগত্ তার দ্বারাই সৃষ্ট হয়েছিল, তবু জগতের মানুষ তাকে চিনল না৷
ঈসা মসিহ হলেন দুনিয়ার সত্যের নূর৷ তাঁর আসবার ব্যাপারে পাকরুহ ভবিষ্যদ্ববাণী করেছিলেন কয়েক শতাব্দী আগে, নবীদের মাধ্যমে৷ দুনিয়ায় মসিহের আগমনের ব্যপারে পুরাতন নিয়মে নবী যিশাইয় বলেছিলেন 'দেখ, পৃথিবী আধারে ঢেকে গেছে আর জাতিদের ওপরে নেমে এসেছে ঘন অন্ধকার, কিন্তু খোদা তোমার ওপরে আলো দেবেন আর তাঁর মহিলা তোমার ওপরে প্রকাশিত হবে' (ইশাইয়া ৬০:২)
আমাদের এপদে 'দুনিয়া' এই শব্দটি চারবার পুনরাবৃত্তি হয়েছে৷ কারণ প্রচারক যোহন এই শব্দটির অর্থকে অন্ধকার হিসেবে দেখিয়েছিলেন, কারণ তিনি লিখেছিলেন 'সমস্ত জগত্ শয়তানের ক্ষমতার নীচে পড়ে আছে'৷ (১ ইউহোন্না ৫:১৯)
প্রথমে দুনিয়া নষ্ট ছিলনা কারণ খোদা দুনিয়াকে সুন্দরভাবে সৃষ্টি করেছিলেন৷ দুনিয়া তার সৌন্দর্য এবং গুনে পরিপূর্ণ ছিল৷ 'আল্লাহপাক তার নিজের তৈরি সব কিছু দেখলেন এবং সেগুলি সত্যিই খুব চমত্কার হয়েছিল৷' (আদিপুস্তক ১ : ৩১) খোদা তার নিজ সুরতে মানুষ সৃষ্টি করলেন এবং তার মহিমা মানবজাতির পিতামাতার উপর অর্পিত হলো, যারা সৃষ্টিকর্তার নূরকে আয়নার মত প্রতিফলিত করেছিল৷
কিন্তু গর্বের কারণে সকলেই দুষ্ট এবং বিদ্রোহী হয়ে উঠল৷ তারা তাদের হৃদয় থেকে খোদার সাথে সহভাগিতা পরিত্যাগ করল, কারণ তারা নিজেদেরকে অন্ধকারের মানসে তুলে দিল৷ খোদা থেকে কেউ দূরে সরে আসলে সর্বদাই নিজেকে নষ্ট করে, যেমন যবুর কিতাবের (১৪ : ১), এ স্বীকার করেছিলেন 'যাদের মন অসাড় তারা ভাবে খোদা বলে কেউ নেই, তাদের স্বভাব নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের কাজ জঘন্য, ভালো কাজ করে এমন কেউ নেই'৷
যাই হোক, প্রচারক যোহন সাক্ষ্য দিয়েছিল এই সত্যের যে ঈসা মসিহ এই নষ্ট জগতে এসেছিলেন ঠিক যেমন কি-না সূর্য ক্রমেই উদিত হয় এবং অন্ধকারকে দূরীভূত করে৷ মসিহের নূর বস্ত্রের ঝলকের মতো আমাদের পৃথিবীতে প্রবেশ করেনি, কিন্তু তিনি শান্তভাবে এসেছিলেন, তাহলো প্রভূ একজন বিচারক বা জল্লাদের মতো আসেননি৷ কিন্তু তিনি এসেছিলেন একজন নাজাতদাতা এবং মুক্তিদাতা হিসেবে৷ প্রত্যেক মানুষেরই মসিহের মাধ্যমে আলোকিত হবার প্রয়োজন রয়েছে৷ এই আলোকসম্পাত ব্যতিত তারা অন্ধকারেই রয়ে যাবে৷ ঈসা মসিহই হলেন একমাত্র সত্য আলোকদাতা, আর কেউ নয়৷ যে কেউ এই সুসমাচারের মধ্য দিয়ে তাঁর এই নূরকে গ্রহণ করে, ফলে তার চরিত্র বদলে যাবে এবং সে সুন্দর হবে ও অন্যদেরকেও আলোকিত করবে৷
এই কথার অর্থ কি তুমি বুঝেছ, 'স্রষ্টা এই পৃথিবীতে এসেছেন'? মালিক তাঁর জায়গায় এসেছেন এবং রাজা তার প্রজাদের নিকটবতর্ী হয়েছেন৷ কে জেগে উঠবে এবং তাঁর আসার জন্য পথ তৈরি করবে? কে তাঁর আগমনের সত্যকে এবং তাঁর নিয়ম ও উদ্দেশ্যকে অধ্যয়ন করবে৷ কে সেই ব্যক্তি যে তার এই পার্থিব এবং মূল্যহীন লক্ষ্যকে ত্যাগ করবে এবং খোদাকে আমন্ত্রণ জানাবে এবং তার দিকে অগ্রসর হবে? কে সেই ব্যক্তি যে এই বৈপ্লবিক ও তুলনাহীন সময়কে উপলব্ধি করে, যে সময় খোদা আগমন করবেন?
এইভাবে প্রভূ হঠাত্ করে গুনাহাগারদের মধ্যে উপস্থিত হন৷ তিনি এসেছিলেন ঘোষণা না দিয়েই এবং মৃদুভাবে ও চুপিসারে৷ তিনি এই দুনিয়াকে তার মহত্ত্ব ক্ষমতা ও গৌরব দিয়ে আলোকিত করতে চাননি৷ কিন্তু তিনি তার নম্রতা, ভালোবাসা এবং সত্যকে প্রকাশ করেছেন৷ সৃষ্টির প্রথম থেকে গর্বই ছিল মানবজাতির পতনের কারণ৷ তাই সর্বশক্তিমান নিজেকে শিশু বিনমূঢ়ভাবে উপস্থাপন করেছিলেন৷ এমনকি শয়তানও আল্লাহপাকের মতো গৌরবময় ও চালাক ও শক্তিশালী হতে চেয়েছিল৷ কিন্তু মসিহ যাবনাপাত্রে আবিভর্ূত৷ এমনি করেই তিনি জয় করলেন তার পরায়নতাকে৷ তিনি মানবকুলের সব থেকে নিচু স্তরে নামেন যাতে করে তিনি সকলকে ওপরে উঠতে পারেন এবং তাদেরকে একসাথে রক্ষা করতে পারেন৷
তোমরা সবাই শুন! এই সুসংবাদের পর, আমরা একটি ধ্বংসকারী এবং ভীতিকর বাক্য দেখতে পাই, সেটা হলো এই দুনিয়া নূরকে চেনে না এবং তাকে উপলব্ধি করতে পারে না৷ খোদার পুত্র তাদের কাছে এসেছেন এবং তাদের মধ্যেই উপস্থিত ছিলেন, এটা তারা উপলব্ধি করতে পারে নাই৷ তারা মূর্খ এবং অন্ধ ছিল যদিও তারা পার্থিবভাবে প্রতিভাবান দার্শনিক এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা রাখে৷ তারা এটা বুঝতে পারেনি যে, খোদা তাদের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ তারা নিজেদের স্রষ্টাকে জানতো না এবং তাদের নাজাতদাতাকে গ্রহন করেনি৷
এই বেদনাদায়ক সত্য থেকে আমরা খোদার রাজ্যের বিষয়ে একটি বৈশিষ্ট্য অনুমান করতে পারি৷ এটা হলো এই যে, আমরা শুধুমাত্র আমাদের মস্তিষ্ক এবং মানবিক যোগ্যতা দিয়ে খোদাকে বুঝতে পারি না৷ ঈসা মসিহের ভালোবাসা এবং তাঁর সত্যময় রহমত বিষয়ক প্রতিটি জ্ঞানই হলো খোদার দান৷ কারণ, এ কাজটি পাকরুহ, যিনি আমাদেরকে সুসমাচারের মধ্য দিয়ে ডাকেন এবং তাঁর দান দিয়ে আমাদের আলোকিত করেন এবং সত্য বিশ্বাসে আমাদেরকে ধরে রাখেন৷ অতএব আমরা অবশ্যই অনুতপ্ত হব এবং আমাদের নিজেদের হৃদয়ের চাতুরতার ওপর আর নির্ভর করবো না অথবা আমাদের আত্মার অনুভূতির ওপর নির্ভর করবো না৷ আমাদের সবার প্রয়োজন নিজেদেরকে সত্য নূরের দিকে উম্মোচন করা, ঠিক যেমন সূর্যের রশ্মির কাছে ফুলগুলো নিজেদেরকে উম্মোচন করে৷ এইভাবে মসিহের ওপর বিশ্বাস স্থাপন সত্যজ্ঞান সৃষ্টি করে৷ এই প্রারম্ভিক বিশ্বাস আমাদের নিজেদের থেকে আসে না বরং এটা প্রভুর রুহেরই কাজ যারা তাকে মেনে চলে৷
প্রার্থনা : ও প্রভূ ঈসা মসিহ, আমরা তোমাকে ধন্যবাদ দেই এই জন্য যে তুমি দুনিয়াতে এসেছিলে৷ তুমি বিচার করতে এবং প্রতিশোধ নিতে আস নাই, কিন্তু সকল মানুষকে তাদের মুক্তির জন্য আলোকিত করতে এসেছিলে৷ কিন্তু আমরা অন্ধ এবং মূর্খ৷ আমাদের অপরাধ সমূহ ক্ষমা করো এবং একটি অনুগত হৃদয় দান কর৷ আমাদের চক্ষু উন্মোচন কর যাতে আমরা দেখতে পাই এবং আমাদের রুহকে তোমার নম্র নূরের রশ্মির দিকে উন্মোচন কর, যাতে করে আমরা তোমার পাকরুহের শক্তির মধ্যে বাস করতে পারি৷
প্রশ্ন: